ডেঙ্গু রোগের লক্ষন ও প্রতিকার | Doctor Info BD

ডেঙ্গু রোগের লক্ষন ও প্রতিকার | Doctor Info BD

  • 16 Feb 2024
  • Best Doctor List

আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্য ডেঙ্গু হলো খুব পরিচিত একটি রোগের নাম। কারন, বাংলাদেশে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের মাত্রা এতোটাই বৃদ্ধি পায় যা বলার মতো না। আর ডেঙ্গু জ্বর আবহাওয়ার সাথে জ্বরের প্রকোপ পরিবর্তন হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কখনই তা অবহেলা করে বসে থাকবেন না। 

আর আপনাকে সচেতন করার জন্য আজকে আমি ডেঙ্গু রোগের লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত বলবো। যেন আপনার মতো মানুষদের ডেঙ্গু রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে কোনো কিছু অজানা না থাকে।

ডেঙ্গু রোগ বা ডেঙ্গু জ্বর কি?

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের এডিস মশা বাহিত ভাইরাসকে বলা হয় ডেঙ্গু রোগ। কোনো একজন সুস্থ ব্যাক্তি শরীরে এডিস মসার ভাইরাস প্রবেশ করলে পরবর্তী ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রাথমিক ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রচন্ড বমি করা, মাথা ব্যাথা হওয়া, জ্বর, দেহের গিঁটে ব্যাথা অনুভব হয়। 

এছাড়াও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির কিছুদিনের মধ্যে ত্বকে মাত্রাতিরিক্ত ফুসকুড়ি দেখা যায়। আর সঠিক সময়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা না নিলে সেটি ধীরে ধীরে রক্তক্ষরী জ্বরের রুপ নেয়। তাই আপনার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের লক্ষন দেখামাত্রই অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। 

ডেঙ্গু হওয়ার কারন কি?

আমরা সবাই জানি যে, ডেঙ্গু হওয়ার একমাত্র কারণ হলো এডিস মশা। যখন কোনো ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত মশা কোনো মানুষকে কামড় দেয় তখন সেই ভাইরাস উক্ত মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা সূর্য উদয় হওয়ার পরের ১ ঘন্টা ও সূর্যাস্তের ০২ ঘন্টা আগে সক্রিয় থাকে। 

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন গুলো কি কি?

যদি আপনাকে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা কামড় দেয় তাহলে আপনি পরবর্তী ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে লক্ষন দেখতে পারবেন। তবে অনেক সময় কিছু মানুষের শরীরে কোনো প্রকার ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন দেখা যায়না। কিন্তুু স্বাভাবিক ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যেসব লক্ষন দেখা যায় সেগুলো হলো, 

  1. অস্বাভাবিক দুর্বলতা অনুভব,
  2. তীব্র পেটে ব্যথা,
  3. শ্বাসকষ্ট,
  4. হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া,
  5. অনবরত বমি,
  6. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
  7. গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ,
  8. রক্তবমি,
  9. পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা,
  10. স্বাদের পরিবর্তন,
  11. ক্ষুধা কমে যাওয়া,
  12. চোখের পেছনে ব্যথা,
  13. রক্তচাপ কমে যাওয়া.
  14. মুখ, দাঁতের মাড়ি এবং নাক থেকে রক্তপাত,

একজন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে যেসব লক্ষন দেখা যায় তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এমন লক্ষন দেখামাত্র আপনাকে নিশ্চিত হয়ে ডাক্তারের নিকট সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। 

 

সিরিয়াল ও ইনফরমেশন এর  জন্য কল করুন - 01902991500 (সকাল ১০:০০ টা হতে রাত  ০১০:০০ টা, শুক্রবার ব্যাতিত)

 

ডেঙ্গু রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা কত হয়?

একজন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির নিয়মিত প্লেটলেট সংখ্যা পরীক্ষা করা উচিত। স্বাভাবিক ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লেটলেটের সংখ্যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। তাই ডেঙ্গু হলে যদি আপনার প্লেটলেটের পরিমান কমে আসে তাহলে সেটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না। 

কারণ একজন স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি microliter (µL) রক্তে প্লেটলেট সংখ্যা থাকে 150,000 থেকে 450,000. আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লেটলেট সংখ্যা অনুযায়ী মোট দুইটি ঝুঁকির পর্যায় নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। যেমন, 

  1. ডেঙ্গু রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা 20,000 এর নিচে নেমে গেলে তা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।
  2. প্লেটলেট সংখ্যা 21,000 - 40,000  এর মধ্যে থাকলে তা মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ।

আর যেহুতু একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির প্লেটলেটের সংখ্যা ঘনঘন পরিবর্তন হয়। তাই আপনাকে প্রতিদিন এক বা একাধিকবার অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে সেটি চেক করে নিতে হবে। শুধু মনে রাখবেন, প্লেটলেট সংখ্যা কমে গেলে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় কি?

সাধারনত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনহানি ঘটার অন্যতম কারন হলো অজ্ঞতা ও অবহেলা। কারন, ডেঙ্গু এমন এক ধরনের ভাইরাস যা শরীরে প্রবেশ করার পর লক্ষন দেখা দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। এছাড়াও আমরা অনেকেই ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার পরও কোনো প্রকার চিকিৎসা নেই না। তো এমনটা কখনোই করা উচিত নয় বরং আমাদের অতি দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।

আর চিকিৎসার পাশাপাশি আপনার ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ে বেশ কিছু করনীয় কাজ আছে যেগুলো আপনাকে করতে হবে। যেমন, 

  1. প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া কমিয়ে দিবেন।
  2. কোনো ধরনের ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।
  3. প্রয়োজনীয় হাঁটাচলা করবেন, একবারে সারাদিন শুয়ে থাকবেন না।
  4. অতিরিক্ত ক্লান্তি মনে হলে বিশ্রাম নিবেন।
  5. হালকা গরম পানিতে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছবেন।
  6. ব্যাথানাশক ঔষধ সেবনে বিরত থাকবেন।
  7. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাবেন না।
  8. তৈলাক্ত, মশলাদার ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলবেন।

সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসার সাথে সাথে আপনি উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো মেনে চলার চেস্টা করবেন। তাহলে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপ আপনার খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবে না। 

 

সিরিয়াল ও ইনফরমেশন এর  জন্য কল করুন - 01902991500 (সকাল ১০:০০ টা হতে রাত  ০১০:০০ টা, শুক্রবার ব্যাতিত)

ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি 

আপনার শরীরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন। তবে চিকিৎসার সাথে সাথে আপনি চাইলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি নিতে পারবেন। এতে করে অন্যান্য ব্যক্তির তুলনায় আপনার কষ্ট কিছুটা হলেও কম হবে। যেমন, 

  1. প্যারাসিটামল বা এই জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করবেন।
  2. প্রচুর প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
  3. পানি, স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস, এবং দুধ জাতীয় তরল পানীয় পান করবেন।
  4. দৈনিক আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করার চেষ্টা করবেন।
  5. মশাড়ি টাঙ্গিয়ে ঘুমাবেন (দিন ও রাতে)।
  6. পেঁপে ও নিম পাতার রস পান করুন।

তো চিকিৎসার পাশাপাশি আপনার ডেঙ্গু প্রতিরোধে যেসব ঘরোয়া চিকিৎসা নেওয়া দরকার সেগুলো উপরে শেয়ার করা হয়েছে। আর আপনার ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই এগুলো মেনে চলার চেস্টা করবেন। 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করনীয় কি?

যেহুতু এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে সেহুতু মশার বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। সেজন্য প্রথমত আপনার বাড়ির আশেপাশে যেখানে ময়লা পানি জমা থাকে সেগুলো পরিস্কার করতে হবে। আর বাড়ির কোথাও যেন পানি জমা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, বালতি, ড্রাম, ফুলের ও গাছের টব, ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারের নীচের পানি জমা থাকা যাবেনা।

দিনে কিংবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাবেন। আর মশার আক্রমন কমানোর জন্য আপনার বাড়িতে মশা প্রতিরোধক লোশন, স্প্রে কিংবা অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করবেন। আপনার শরীর পোশাকের মাধ্যমে অধিকাংশ অংশ ঢেকে রাখার চেস্টা করবেন। নিয়মিত হাত মুখ ধুয়ে নিজেকে সবসময় পরিস্কার পরিছন্ন রাখার চেস্টা করবেন। 

এডিস মশা চেনার উপায় কি?

সাধারন মশার চাইতে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা খুব সহজেই চেনা যায়। কেননা, এই ধরনের মশা গুলো দেখতে কিছুটা সাদা কালো ডোরাকাটার মতো হয়। এছাড়াও এডিস মশার মাথার পেছনের অংশে উপরের দিকে তাকালে একটি সাদা দাগ দেখতে পারবেন। আর এই চিহ্ন গুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই অন্যান্য মশার মধ্যে এডিস মশাকে আলাদা করতে পারবেন। 

আর এডিস মশা সকালের প্রথম দিকে এবং সন্ধ্যা হওয়ার কিছুটা আগের সময়ে খুব তৎপর থাকে। তাই এই সময় গুলোতে অবশ্যই আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পোশাক পড়বেন। এছাড়াও উক্ত সময়ে ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমাবেন। 

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ?

আমরা অনেকেই মনে করি যে, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা যাবেনা। কারণ, আমরা ডেঙ্গুকে ছোঁয়াচে রোগ মনে করি। তো এমন ধারনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কারন ডেঙ্গু কোনো ধরনের ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই আপনার পরিবারের কোনো ব্যক্তির ডেঙ্গু জ্বর হলে তাকে আলাদা করে রাখার কোনো প্রয়োজন হবেনা। 

 

সিরিয়াল ও ইনফরমেশন এর  জন্য কল করুন - 01902991500 (সকাল ১০:০০ টা হতে রাত  ০১০:০০ টা, শুক্রবার ব্যাতিত)

 

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

ডেঙ্গু রোগের লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে আজকে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আর এই রোগের লক্ষন গুলো দেখা মাত্রই আপনাকে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি আপনি আজকের শেয়ার করা নিয়ম গুলো মেনে চলার চেস্টা করবেন। 

আর আপনার যদি ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।